Bipolar Disorder ক্ষণে ক্ষণে মন বদলায় কেন?
Bipolar Disorder ক্ষণে ক্ষণে মন বদলায় কেন? প্রতি মুহূর্তে মন বদলায়? কখনও আনন্দ, আবার একটু পরেই বিষণ্ণতা।
সোজা কথায়, দীর্ঘসময় ধরে কারোর মুডের (Mood), আবেগের (Emotion) বা মানসিক অবস্থার (Mental State) পরিবর্তন ঘটতে থাকলে তাকে বাইপোলার ডিসঅর্ডার (Bipolar Disorder) বলেন চিকিৎসকরা।
এই রোগে আক্রান্ত মানুষের কখনও অনেকক্ষণ ধরে বিষণ্ণতা বা মন খারাপ থাকে। কখনও সেটা কয়েক মাস ধরে চলতে পারে। আবার একই মানুষ একসময় সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী আচরণ করতে শুরু করেন। সেই সময় তিনি অতিরিক্ত হাসিখুশি বা উচ্ছ্বাস প্রবণ হয়ে ওঠেন।
চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিসের (Diabetes) মত বাইপোলার ডিসঅর্ডার ও একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। ওষুধ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তবে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় না।
১) বাইপোলার ডিসঅর্ডার আসলে ঠিক কী?
বাইপোলার অর্থ দুই মেরু। অর্থাৎ একজন মানুষের মনের এক দিকে থাকে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস প্রবণতা, যাকে চিকিৎসকরা বলেন ম্যানিয়া এপিসোড (Mania Episode)। রোগী অতিরিক্ত হাসিখুশি থাকেন, কথা বেশি বলেন, অনেক সময় জিনিসপত্র বিলিয়ে দেন।
আরেকপ্রান্তে থাকে বিষণ্ণতা, যাকে চিকিৎসকরা বলেন ডিপ্রেশন এপিসোড (Depression Episode)। এই সময় কিছুই ভাল লাগে না, মন ভরে যায় হতাশায়, দুঃখ বোধ প্রবল থাকে। অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়।
এই দুইয়ের মাঝামাঝি সময়ে রোগী ভালো থাকেন। সেই সময় অন্য সব মানুষের মতই স্বাভাবিক আচরণ করেন। মনোবিদদের বক্তব্য, একেকটি এপিসোড (ম্যানিয়া অথবা ডিপ্রেশন) কখনও কয়েকদিন, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস ধরেও চলতে পারে।
২) বাইপোলার ডিসঅর্ডার কেন হয়?
- বাইপোলার ডিসঅর্ডার ঠিক কেন হয়, তা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে এর পেছনে কয়েকটি উপাদান কাজ করে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন।
- যেমন, যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের (NHS) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে অন্তত একজন জীবনের কোন একটি পর্যায়ে বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগে থাকেন।
- অনেক সময় জেনেটিক্যালি বা বংশগত কারণে বাইপোলার রোগটি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে চলে আসে।
- বিশেষত মস্তিষ্কে সেরোটোনিন (Serotonin), ডোপামিন (Dopamine), নরঅ্যাড্রেনালিন (Noradrenaline) ইত্যাদি নিউরোট্রান্সমিটারের (Neuro-Transmitter) ভারসাম্যহীনতা, স্বায়ুবিকাশজনিত সমস্যা, মানসিক রোগের ভুল চিকিৎসা ইত্যাদি কারণে বাইপোলার হতে পারে।
- সাধারণত অল্পবয়সে এই রোগের প্রকাশ দেখা যায়। নারী ও পুরুষ-উভয়েরই এই রোগটি হতে পারে। একজন থেকে আরেকজনের ক্ষেত্রে লক্ষণের পার্থক্য থাকতে পারে।
- নিয়মিত ওষুধ এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা খুব জরুরি, বলছেন গবেষকরা।
- কারণ বয়স বাড়লে, চাকরি এবং ফ্যামিলি লাইফ শুরু হওয়ার পরেও মাঝে মাঝে মুড চেঞ্জ হতে পারে। মন খারাপ হয়, অযথা কেনাকাটা করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসার মধ্যে থাকলে নিজেকে খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে তারপরও এমন কিছু আচরণ হয়ে যায়, যা পরে মনের মধ্যে অনুশোচনা তৈরি করে।
- আচরণ পরিবর্তনের কারণে কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কে অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
৩) ম্যানিয়া এপিসোড
- অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ, অতি উচ্ছ্বল মনোভাব
- অতিরিক্ত কথা বলা
- নিজেকে বিশাল শক্তিশালী, বড় কেউ, ক্ষমতাশালী মনে করতে শুরু করা
- হাই এনার্জি বা অতিরিক্ত কাজের প্রবণতা
- খাবারে অনীহা
- অযৌক্তিক কথা, দাবি, বা চিন্তাভাবনা করা
- নিদ্রাহীনতা, ঘুম এলেও ঘুমোতে না চাওয়া
- হঠাৎ রেগে যাওয়া, ঝগড়াঝাঁটি বা মারামারি করা
- বেপরোয়া মনোভাব
- বেশি বেশি খরচ করতে শুরু করা, অদরকারি জিনিসপত্র কিনতে চাওয়া
- মনোযোগ হারিয়ে ফেলা
- যৌন-স্পৃহা(Libido) বেড়ে যাওয়া
- নিজের জিনিসপত্র অন্যদের বিলিয়ে দেওয়া
৪) ডিপ্রেশন ডিজঅর্ডার
- দীর্ঘসময় বা দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকা, হতাশায় ভোগা
- বিনা কারণে কান্নাকাটি করা, উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠা
- আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা
- নিজেকে ক্ষুদ্র, তুচ্ছ বলে মনে করা
- আত্মহত্যার প্রবণতা, জীবন সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মরে যেতে চাওয়া
- কোন ঘটনাতেই আনন্দ বা খুশী হতে না পারা
- খাবারের আগ্রহ হারিয়ে ফেলা বা অতিরিক্ত খাবার খাওয়া
- অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ, কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
- অপরাধ বোধ, নিজেকে দোষী ভাবা
- যৌন-স্পৃহা কমে যাওয়া
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
- মনোযোগ হারিয়ে ফেলা
- খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া
*মনে রাখতে হবে,
বিষণ্ণতার সঙ্গে বাইপোলারের একটি বড় পার্থক্য হচ্ছে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা একটা সময় বিষণ্ণতায় ভুগলেও আরেকটা সময় ঠিক বিপরীত আচরণ করেন।
সাধারণত দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিষন্নতা বা অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসে ভুগলে তখন বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছেন বলে ধারণা করা যেতে পারে।
বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কী চিকিৎসা রয়েছে?
এটা একেবারে নিরাময় সম্ভব নয়। তবে ডায়াবেটিস রোগের মত নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে থাকলে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বলছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকের দেয়া ওষুধ এবং পরিবারের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে থাকলে এই রোগটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কারও মধ্যে বাইপোলার ডিসঅর্ডার দেখা গেলে অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের উচিত, তার সঙ্গে সতর্ক আচরণ করা। বিশেষ করে তার সঙ্গে সরাসরি কোন তর্ক না করা। জোরাজুরি করা বা জোর খাটানো একেবারেই উচিত নয়।