kolponarrong

আমার বউকে কিছুতেই আমার সাথে আসতে দিবে না। মা বলে,বউ তাদের সাথে থেকে সেবা করবে।

আমি সুন্দর করে বুঝালাম,
-“মেয়েদের বিয়ের পর সর্বপ্রথম প্রাধান্য হচ্ছে স্বামী।তাছাড়া আমি একা থাকি,বউ সাথে থাকলে আমার খাওয়া, যত্নের বিষয় টাও সহজ হয়ে যাবে।”
বিয়ের পর বউ স্বামীর থেকে দূরে থাকবে, আমি সবসময়ই এটার বিপক্ষে ছিলাম।
পড়ালেখার জন্য বাবা মায়ের থেকে দূরে আছি বহুবছর। ভেবেছিলাম পড়া শেষ করে গ্রামে চলে যাবো কিন্তু তা আর হয়নি,চাকরির জন্য এখনো বাবা মায়ের থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে।বাবা মায়ের ইচ্ছে তে বিয়ে টাও করে নিলাম।কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো,বাবা মাকে নিজের সাথে আনতে চাইলেও তারা আসবেন না,আবার আমার বউ আমার সাথে থাকবে সেটাও মানতে নারাজ।আমি মাকে বললাম,
-“মা সেই ছোট থেকে দেখে আসছি তুমি একদিনও বাবাকে ছেড়ে আমাদের নানাবাড়িতে বেড়াতে না,দিনে গেলেও সেদিনই চলে আসতে।বাবার কিছুর প্রয়োজন হলে কোথাও গেলে সবসময়ই তোমাকে সাথে নিয়ে যেত।কই তখন তো আমার দাদি তোমাদের বাঁধা দেয়নি।আমারও শখ আছে আমি বউকে নিয়ে ঘুরবো,গল্প করবো।সেও তো মনে কত স্বপ্ন বুনেছে বিয়ের পর বরের সাথে ঘুরাঘুরির।শশুড় শাশুড়ির সেবার নাম করে তাকে তো স্বামীর হক থেকে বঞ্চিত করতে পারি না।”
এভাবে অনেক বুঝানোর পরে মাহাকে আমার সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম।আমার ছোট্ট সংসার টা ভালো চলছে।এখানো প্রয়োজনীয় অনেক কিছু নেই তবে মাহা মানিয়ে নিচ্ছে। মাহাকে যত দেখি তত অবাক হয়ে যাই, অল্পের মধ্যেও কত তুষ্ট থাকে মেয়ে টা।পাশে বসে এটা সেটার কথা বলে।আমি বুঝতে পারি কিন্তু পকেটে টাকা কম তাই তার কথা গুলো শুনেও না শুনার মত করে থাকি।আমার এমন নিরবতা দেখে মাহাও চুপ হয়ে যায়, আর কিছুর আবদার করে না।হয়তো বার বার বলতে বলতে তারও মন মরে গেছে।আমিও তো নিরুপায়।একদিন আমার বউটাকে তার শখের সব কিনে দিবো।সেদিন আমার ওপর আর অভিমান করে থাকতে পারবে না আমি জানি।
মা প্রায়ই ফোন করে, আমাদের খবর নেয়।খবর নেয় বলতে কেমন আছি এতটুকুই জিজ্ঞেস করে। আর বাকি সময় টুকু শুধু তার এটা লাগবে,তার ওটা লাগবে এসবই বলে।কখনো জিজ্ঞেস করে না,
আজকে কি রান্না হয়েছে,আমাদের কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা,ঠিকঠাক ভাবে চলতে পারছি কিনা।ছেলে হয়ে জন্ম নিলে হয়তো মায়েরা এসব জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করে না।চাকরি করি বলেই যে আমাদের কোনো অভাব নেই এই ভুলটা কবে ভাঙবে আমার জানা নেই।এমনও সময় যায় আমরা ডিম ভেজে খেয়ে দুজনে পেট ভরি।আমি ছেলে বলে,মাকে বলতে পারি না,
-“মাগো এই মাসে হাত খালি,মাগো সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।”
মাঝে মাঝে মাকে বলতে ইচ্ছে করে,
-“মা তুমি শুধু তোমার যা লাগবে তা বলেই কল রেখে দাও ,আমার কিছু লাগবে কিনা তা তো কখনো জানতে চাও না!মায়েরা নাকি নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে,মা?”
মনের কথা মনেই থেকে যায় কিন্তু কখনো বলতে পারবো না।
অথচ মেয়ে হলে কত শান্তি। বাবা মা টাকার জন্য অপেক্ষা করে না, বউ নিয়ে হিংসা করে না বরং মেয়ের জামাই কে পারলে মাথায় তুলে রাখে।মেয়ের কি লাগবে তা জেনে কতকিছুই পাঠিয়ে দেয়।এই দিক থেকে তো আমি মনে হয় মেয়েরাই অনেক সুখী, যারা চাকরি করে না, যাদের বাবা মা মেয়ের টাকার জন্য অপেক্ষা করে না।
বউটা আমার শুরুতে আমার মাকে মন থেকে আপন ভাবতে চাইলেও এখন আর পারে না। মা কখনো আমার বউয়ের সাথে কথাই বলতে চায় না।সে যেন মনে করে আমার সব টাকা বউ শেষ করে দেয়।
বউ একদিন গোমড়া মুখ করে বলেই দিলো,
-“দেখো ফাহাদ, প্রতি মাসে তুমি তোমার মায়ের প্রয়োজনীয় সব কিনে দাও, টাকাও দাও কিন্তু তাতে আমার সমস্যা নেই।সমস্যা হচ্ছে তুমি শুধু তার টা দেখো,আমাদেরও যে কতকিছু প্রয়োজন সেসব দেখার মত চোখ কি তোমার নেই? আমি মানিয়ে নিচ্ছি বলে আমার ওপর এভাবে অন্যায় করতে পারো না।আমারও তো সংসার টা গোছাতে ইচ্ছে হয়,আমারও অনেক কিছুই প্রয়োজন!শুধু পোশাক আর কাপড় বাদেও মেয়েদের অনেক কিছুর শখ থাকে।”
আমি কিছু বলতে পারলাম না। আসলেই তো, বউকে দিবো দিবো করে বিয়ের এক বছর পার হয়ে গেলেও তাকে শুধু অপেক্ষাই করাচ্ছি।এই মাসে মায়ের জন্য একটু কম টাকা পাঠিয়ে,বউয়ের জন্য একটা পারটেক্সের আলমারি কিনে আনলাম।বউ তো আমার অনেক খুশি।পারলে আমাকে কোলে নিয়ে নাচে।
অপরদিকে মা আর আমার সাথে কথা বলে না, আমাকে ফোন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।অথচ আমার বউটাকে যে কত অপেক্ষা করিয়েছি, কখনো তো আমার সাথে একটুও খারাপ ব্যবহার করেনি।অনেকেই বলে বউ নাকি পরের মেয়ে। বিয়ের পর এই পরের মেয়ে, পরের ছেলেই দুজন দুজনার সুখ দুঃখের সাথী। বাকি আর কেউ কারো না।স্বার্থে আঘাত লাগলে কিছু মায়েরাও মুখ ফিরিয়ে নেয়,তবে সব মায়েরা না!
আবার আমার ছোট ভাইয়ের কথা যদি বলি।সে সবসময় তার বউয়ের প্রয়োজনীয় জিনিস দেয়, মাকে কখনো এক টা টাকাও দেয়নি।মায়েরও তার কাছে কোনো আবদার নেই, অভিযোগ নেই।
মাঝে মাঝে শুনি আমার ভাইয়ের বউয়ের পেছনে সব টাকা খরচ করার পরেও তার বউ বলে,
-তুমি আমার জন্য জীবনে কি করছো?
আসলে সব নারী যেমন স্বামীর অল্পতে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না, আবার সব মায়েরা সন্তানকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতেও পারে না।