
দেবপ্রয়াগ – গঙ্গা নামের উৎপত্তি যেখানে
দেব প্রয়াগ। হিমালয় মাত্রই দেবভূমি। দেবতাদের বাসস্থান। যাকে ঘিরে কতো পৌরাণিক গাথা, কতো কাহিনী, কতো আলোচনা। যার প্রতিটি ছত্রে লুকিয়ে রহস্য – প্রকৃতির রহস্য। আর এই প্রকৃতির রহস্য, আধ্যাত্মিকতা ও মহাদেবের টানে পাহাড় প্রেমী মানুষ ছুটে চলেছে হিমালয়ের পাদদেশে। অভিপ্রায় তাঁকে ছুঁয়ে দেখার, অভিপ্রায় তার বিশালতার সামনে নিজের অহংকার ও অস্তিত্বকে বিসর্জন দেওয়ার, অভিপ্রায় শান্তি। এক অপার অকৃত্রিম মানসিক শান্তি।
নদীমাতৃক দেশ আমাদের ভারতবর্ষ। যেখানে নদীকে আমরা মা রূপে পূজা করি। তার মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র নদী ধরা হয় উত্তরাখন্ডের পাঁচ নদীকে। যে নদী গুলির মিলনে গঠিত হয়েছে প্রয়াগ – পঞ্চ প্রয়াগ । দেবপ্রয়াগ, রূদ্রপ্রয়াগ, নন্দপ্রয়াগ,কর্ণপ্রয়াগ ও বিষ্ণু প্রয়াগ।
‘প্রয়াগ’ যার সংস্কৃতে অর্থ জন্মানো। হরিদ্বার থেকে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার দূরে ২৭২৩ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই দেবপ্রয়াগ। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ থেকে উৎপন্ন ভাগীরথী এবং হিমালয়ের সতপন্থ ও ভাগীরথী খরগ হিমবাহের সঙ্গমস্থল থেকে উৎপন্ন অলকানন্দা এই স্থানে মিলিত হয়ে উৎপন্ন করেছে মা গঙ্গার। যার ২৭০৪ কিলোমিটার পথ ঘিরে গড়ে উঠেছে ৫০ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা।
দেব প্রয়াগ – ‘দেবো কা প্রয়াগ’ বা ‘ঈশ্বরের সঙ্গম’ নামে পরিচিত। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে দেবপ্রয়াগ হলো দুটি দৃশ্যমান স্বর্গীয় নদীর মিলনস্থল। বিশ্বাস করা হয় এখানে ভগবান রাম ও তাঁর পিতা দশরথ তপস্যা করেছিলেন। এখানে মহাদেব ও রামের বহু প্রাচীন মন্দির লক্ষণীয়। আবার মনে করা হয় সত্য যুগে ঋষি দেবশর্মা এই স্থানে ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা করেছিলেন এবং ভগবান বিষ্ণু তাঁকে বর দিয়েছিলেন ভবিষ্যতে তাঁর উপাসনাস্থলটি তাঁর নামেই পরিচিত হবে।
দেবপ্রয়াগে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালে আপনারা তিনটি পর্বত বা অঞ্চল দেখতে পাবেন। রঘুনাথ জির মন্দিরের শীর্ষে অবস্থিত গিদ্ধাঞ্চল পর্বত। গিদ্ধাঞ্চল পর্বতের বিপরীতে অবস্থিত নরসিংহাঞ্চল পর্বত এবং সঙ্গমস্থলের ডানদিকে অবস্থিত দশরথঞ্চল পর্বত।
হরিদ্বার থেকে শ্রীনগরের দিকে যাওয়ার পথে দুটি আলাদা রঙের নদীর মিলন দেখতে দাঁড়ায় না এরকম ব্যক্তি একজনও নেই। কি তার স্বর্গীয় রূপ। রঙের খেলা। ঐশ্বরিয়া অনুভূতি।