এই মাকেই তো আমরা চাই, আমরা পুজো করি
গত দুবছর ধরে পুজোতে ঠাকুর দেখতে না বেরিয়ে একটা অদ্ভুত realization হলো। এতকাল আমি সেই মহালয়ার দিনই সবাইকে ফোন করে কবে কোন দিকের ঠাকুর দেখতে যাবো সেই প্ল্যান করে রাখতাম। পুজোতে ঠাকুর দেখবো না তাই আবার হয় নাকি! উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম সব কমপ্লিট করবো এরম করেই প্ল্যান বানাতাম। আর সেই এনার্জিও মারাত্মক।
বছরের অন্যদিনগুলোতে আমায় অত হাঁটতে বললেও আমি হাঁটবো না। কিন্তু পুজোতে না নেই। যতদূর যেতে বলবে যাবো হেঁটে। বেশ লাগত। এমনও হয়েছে বাড়ি এসে আমায় পায়ে ব্যথার হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেতে হয়েছে। 😅 পা ফুলে গেছে। তবুও পরের দিন বেরিয়ে আবার হুলিয়ে ঠাকুর দেখেছি। কিন্তু জানিনা করোনা এসে আমায় কি জাদু করলো! মানসিকতা অনেকখানি বদলে দিল আমার।
গতবছর সেভাবে কেউই ঠাকুর দেখেনি। আমিও না। কিন্তু এবছরে অনেকেই যথারীতি কুড়ির আগের সাল গুলোর মতনই দেখেছে ঠাকুর। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমি এখনও খাপ খাওয়াতে পারিনি। সেই ইচ্ছেটাই যেনো হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখা, গাদা গাদা প্যান্ডেলের ছবি তোলা, ঠাকুরের ছবি তোলা, না তুলতে পারলে মন খারাপ হওয়া,,,,, এসবই হয়ে এসেছে এতদিন।
কিন্তু এবছর আমি বুঝলাম যে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে ভিড় এড়ানোর। আর ভিড় ভাল্লাগে না। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, এতদিন আমি ছোট লোকাল প্যান্ডেল গুলো যেগুলোতে কোনো গ্র্যাঞ্জার নেই কোনো থিম নেই একেবারে সাদামাটা প্যান্ডেল আর তারচেয়েও সাদামাটা দুগ্গা,,,সেগুলো লক্ষ্যই করতাম না। মনে হতো, ধুর, এগুলো আর কি দেখবো!!
কিন্তু এবছর সেই realization টাই হলো। অচেনা পাড়ার মোড়ের এই ক্ষুদ্র নামহীন প্যান্ডেলগুলো দেখে একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়াতে মন চাইলো। যেখানে অন্যান্য তথাকথিত থিম পুজোতে মানুষের ঢল সামলাতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে সেখানে এইসব প্যান্ডেল গুলোতে মানুষ তো দূরের কথা, কাক পক্ষীও নেই।
এই বিগ্রহগুলোর কোনো থিম নেই, চাকচিক্য নেই, আড়ম্বর নেই। বড়ই সাদামাটা, বড়ই আটপৌরে, ঠিক যেন মায়ের মতন। আর এই মাকেই তো আমরা চাই, আমরা পুজো করি। আমাদের সবার জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে এই অনাড়ম্বর মায়ের কি অসম্ভব মিল তাইনা!!! তবে এই দুগ্গা মা কে আবার ফিরে যেতে হয় কৈলাসে! বাবার কাছে। তাই মা আজ ফিরে যাবেন। আবার এক বছরের অপেক্ষা।😊
আশা করি সবার পুজো খুব ভালো কেটেছে। সবাইকে জানাই শুভ বিজয়ার প্রীতি শুভেচ্ছা ও আন্তরিক ভালোবাসা। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ভগবান এক করোনামুক্ত সুস্থ পৃথিবী দান করুক আমাদের এই কামনা করি ।
ভালোবাসলে এমন কাউকে ভালোবাসো যে তোমার ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে