প্রিয় বাচ্চু ভাই স্মরণে

পার্থ নামে চট্টগ্রামের একজন ছেলে গিটার শিখতে চাইতো আপনার কাছে। আপনার বাসায় এসে বসে থাকতো আশির দশকে। আপনি তাকে বিনামূল্যে গিটার বাজানো শিখিয়েছিলেন। ছেলেটা কালের বিবর্তনে পার্থ বড়ুয়া হয়ে গেলো!

আগুন নামে একজন তরুণ শিল্পী গান ছেড়ে দিলো। সালমান শাহ মারা গিয়ে আগুনকে নিয়েই যেনো গেলো। ছেলেটার খুব অভিমান। আপনি তাকে বললেন তুই গান গাইস না অসুবিধা নাই। শুধু আমাকে দুটো গান লিখে দে। একটা গান লেখার পর সুর করে তাকে বললেন স্টুডিওতে আয়। ছেলেটা নাছোড়বান্দা গাইবেই না। আপনার অসাধারণ সুর ও গানের শেষের এক মিনিট লিড বাজানো শুনে আগুন গাইতে রাজি হলেন। গানটা হলো “আমার স্বপ্নগুলো”. আগুনের সিগনেচার গান হয়ে গেলো এটাই!

হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম বের করার কথা আপনি ভাবছেন। সময় নেই আপনার। কী করা যায়! হোটেলে একটা রুম ভাড়া করলেন। পুরো একসপ্তাহ রুমে গান নিয়ে কাজ করলেন দুইজন। অনেকগুলো গান থেকে জুয়েলকে বললেন তুই দশটা সিলেক্ট কর! অ্যালবাম হয়ে গেলো!

কিংবদন্তি শিল্পী তপন চৌধুরী প্রথম সলো অ্যালবাম বের করবেন। আপনাকে বললো। আপনি পুরো অ্যালবামের সুর ও সংগীত পরিচালনা করলেন। আমরা অসাধারণ তপন দাকে পেলাম। বাড়তি হিসেবে পেলাম চাঁদপুর থেকে উঠে আসা গ্রামের ছেলে গীতিকার কবির বকুলকে। বকুল ভাইয়ের লেখা গান প্রথম কোন অ্যালবামে। কবির বকুল এরপর চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন গীতিকার হিসেবে। আপনি পথ না দেখালে বকুল ভাই হয়তো চাকুরি করতো এখন। আমরা পেতাম না এমন গীতিকার!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র অল্পবিস্তর গান লিখে। আপনার কাছে এসেছে। আপনি কথা দিয়ে বললেন তোকে আমি দেখবো। কিছুদিন পর একটা অ্যালবামের সব গান তাকে দিয়ে লেখালেন। গীতিকারের নাম শফিক তুহিন। আপনি অ্যালবামের সুরকার, সংগীত পরিচালক। অ্যালবামের নাম “মন জ্বলে”। ঐ অ্যালবামের বিখ্যাত গান “তুমি কি আমায় আগের মত বাসো ভালো?”

ময়মনসিংহে গান গাইতে গিয়ে আপনাদের ব্রেকে একটা ছেলে গান গাইলো। তার গান ভালো লাগায় বললেন ঢাকা আসতে। মন জ্বলে অ্যালবামের টাইটেল ট্র‍্যাক তাকে দিয়ে গাওয়ালেন। শিল্পীর নাম রুপম। রুপম ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর তার চেয়ে বেশি জিঙ্গেল ও চলচ্চিত্রের গান খুব বেশি মানুষ গায়নি।

মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী নাটক বানানো শুরু করেছেন। তার সমালোচকের শেষ নেই। দুজন মানুষ তাকে স্নেহ করেন ভীষণ। তারেক মাসুদ ও আপনি। ফারুকী ভাই ছবি বানাবেন। নাম ব্যাচেলর। আপনাকে ফোন দেন। আপনি বলে “ছরু চলে আয়!” ব্যাস হয়ে গেলো!

পরিচালক কাজী হায়াত নায়ক মান্না ও বহুদিন পর ছবি করা নায়িকা শবনমকে নিয়ে আম্মাজান নামে ছবি বানাবেন। সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ভাই। কাজী হায়াত মাকে নিয়ে মানুষের মুখে মুখে যায় এমন গান চান বুলবুল ভাইয়ের কাছে। বুলবুল ভাই লিখলেন,সুর করলেন। গাওয়াবেন কাকে দিয়ে ভাবছেন। বাচ্চু ভাইকে ফোন দিলেন। বাচ্চু ভাই গড়িমসি করে এলেন। এরপরেরটা ইতিহাস। এ গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়ায় আপনার আফসোস ছিল!

সোলসের আচমকা শো নাই। পার্থ দা’রা হতাশ। বাচ্চু ভাইর কনসার্টে সোলসকে নিয়ে গেলেন। পার্থ দা’র পকেটে ঢুকিয়ে দিলেন ত্রিশ হাজার টাকা!

বাচ্চু ভাই “আমার আমি” অনুষ্ঠানে এলেন। তার স্বপ্নের কনসার্টে জেমস ভাই, মানাম ভাই, সুমন ভাইকে নিয়ে বাজাতে চাইলেন। জেমস ভাই মনে রেখেছেন। মানাম ভাই মাটির মানুষ। সুমন ভাইকে নিয়ে লিখলাম না। শুধু এটুকু বলব বাচ্চু ভাই অন্যদের দিয়ে যত হিট গান করিয়েছেন তত গান অনেকে নিজেই গাইতে পারেনি!

এরকম আরো অনেক গল্প আমি জানি। আর লিখতে পারছিনা। আবেগ কাজ করছে বাচ্চু ভাই। আপনার প্রথম গান শুনি সম্ভবত ১৯৯৫ সালে শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে। কষ্ট অ্যালবামের টাইটেল ট্র‍্যাক “কষ্ট “। আপনি কষ্ট পেতে ভালোবাসেন, আপনি কষ্ট দিতেও ভালোবাসেন। তাই এভাবে চলে গেলেন।

আপনার সংস্পর্শে যারা এসেছে তারাই কিংবদন্তি। আর আপনি বাংলাদেশের সঙ্গীতের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান। যার ছায়াতলে আসতে পারাও ভাগ্য। আর আমাদের সৌভাগ্য আপনার জন্ম বাংলাদেশে!

ভালো থাকবেন রুপালি গিটার নিয়ে। শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা বাচ্চু ভাই।

Read More

Khichdi 2 Box Office Collection Day 7: Khichdi 2 বক্স অফিসে টিকতে পারছে না!