চোখ ভরে সবুজের সাক্ষী হতে ছোট্ট ছুটিতে
পূর্ব বর্ধমানের একটা ছোট গ্রাম #বেলুন। সেখানেই রয়েছে “বেলুন ইকো ভিলেজ অ্যান্ড রিসর্ট“। করোনার ভয়ে পুজোয় বুর্জ খলিফা সহ সব বিগ বাজেটের পুজো অধরাই ছিল। তাই লক্ষ্মী পুজোর পর মনকে শান্ত করতে আর বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে কর্তা গিন্নি সপ্তাহ শেষে পৌঁছে গিয়েছিলাম স্বল্প পরিচিত বেলুন ইকো ভিলেজে।
বিবাহসূত্রে আমি বাটানগর নিবাসী তাই 23/10/2021 তারিখে শনিবার আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল নুঙ্গি স্টেশন থেকে ভোর 6:39 এর ট্রেনে শিয়ালদহ হয়ে বেলুনের উদ্দেশ্যে। বেলুন পৌঁছানোর জন্য শিয়ালদহ অথবা হাওড়া থেকে কাটোয়া লোকাল বা কাটোয়াগামী যেকোনো ট্রেনে কাটোয়া যেতে হয়। আমরা 8:06 এর শিয়ালদহ-কাটোয়া লোকাল ধরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার একটু বেশী সময়ে বেলা 11:45 নাগাদ কাটোয়া পৌঁছেছিলাম। সেখান থেকে আজিমগঞ্জগামী ট্রেনে শিবলুন স্টেশন নেমে টোটো ধরে পৌঁছানো যায় বেলুনের রিসর্টিতে কিন্তু বর্তমানে ট্রেনের অপ্রতুলতার কারণে আমরা রিসর্ট থেকে ঠিক করে দেওয়া টোটো করেই সরাসরি গিয়েছিলাম। এতে খরচ বেশি পড়ে একটু।ট্রেনের ঝামেলা এড়াতে সরাসরি দুচাকা বা চারচাকাতেও যাওয়া যায়।
এবার আসি বেলুনে কি ঘোরা/দেখা যায়। যেহেতু এটি একটি ছোট্ট গ্রাম তাই খুব বেশী কিছু ঘোরার বা দেখার নেই। কিন্তু রিসর্টটি খানিক তপোবনের আদলে তৈরি হওয়ায় প্রচুর নাম না জানা ফুলের গাছ, পাখি, প্রজাপতি ইত্যাদি দেখতে পাবেনই। এছাড়া বনবিড়াল, মেছোবিড়ালের দেখাও মিলতে পারে। গ্রামের রাস্তা ধরে হেঁটে দেখে আসা যায় শিবাই নদী, বর্ষায় যার রূপ নাকি ভয়ঙ্কর। কিছুদিন আগের অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে দুধারের জমিতে জল কাদা তখনও ছিল তাই খুব বেশী দূর আমরা যেতে পারিনি। আর রয়েছে এখানকার ইকো টয়লেট ও বাথটব।
খোলা আকাশের নীচে এই বাথটবে ইচ্ছা হলে খানিক সময় কাটানোই যায়।
এবার বলি থাকা ও খাওয়ার কথা। এই রিসর্টে চারটি কটেজ আছে। প্রতিটিতে A.C. ও সেপারেট ইকো টয়লেট আছে যার কিছুটা অংশে উপরে অ্যাসবেস্টর দিয়ে ঢাকা ও বাকিটা কোনো বড় গাছের ছায়া ঘেরা বেশ অন্যরকম। ঘর ও টয়লেট বেশ প্রশস্ত।
এখানকার খাবারের মাত্রা আলাদাই।চারবেলার যা খাবার তা আমরা খেয়ে শেষ করতে পারিনি। পৌঁছানোর সাথে সাথে ই পেয়ে যাবেন লেবুর সরবত।
আমাদের ব্রেকফাস্টে ছিল লুচি, আলুর দম, কলা,ছোলা ও রসগোল্লা।
লাঞ্চে ভাত, শাক ভাজা, সবজি ডাল, গন্ধরাজ লেবু, আলু ভাজা, মাছ ভাজা, চালকুমড়োর ঘন্ট, পটল চিংড়ি, মাছের ঝোল, চাটনি, পায়েস। সন্ধ্যায় ছিল মুড়ির সাথে দুই রকম তেলেভাজা, শসা, টমেটো, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা কুচি ও নারকেল টুকরো।
রাতের খাবারে ভাত/রুটি, ডাল, মিক্সড সবজি, ডাবল ডিমের অমলেট, কচি পাঁঠার কষা মাংস ও সন্দেশ। এছাড়া সকাল ও সন্ধ্যায় চা, বিস্কুট ছিলই।
আমরা শনিবার লাঞ্চ থেকে শুরু করেছিলাম তাই রবিবার ব্রেকফাস্ট সেরে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা হয়েছিলাম।
যেহেতু কটেজ সংখ্যা কম তাই আগে থেকে ঘর বুকিং করে রাখতে হয় নাহলে ঘর না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আমরা একমাস আগেই বুকিং করেছিলাম। বেলুন ইকো রিসর্টের নম্বরে ফোন করে বুকিং করা যায়। শহুরে একঘেয়ে জীবনের ক্লান্তি কাটাতে, বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিয়ে ফুসফুসকে সতেজ করতে আর চোখ ভরে সবুজের সাক্ষী হতে ছোট্ট ছুটিতে বেলুন ইকো রিসর্ট নিরাশ করবে না।