তুমি কেন বলো বাপের বাড়ি যাচ্ছি ?

#নিজের বাড়ি

তুমি কেন বলো বাপের বাড়ি যাচ্ছি ?

ছোটবেলায় যখন মামা বাড়ি যেতাম, আমার মাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে মা বলতো,

” বাপের বাড়ি যাচ্ছি”।

কথাটার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারতাম না। মাকে ও জিজ্ঞেস করেছি অনেকবার ছেলেবেলায়,

“যেখানে বাবা-মা থাকে সেটা তো নিজের বাড়ি হয় বলো।যেমন আমার বাবা-মা এই বাড়িতে আছে, তাহলে এই বাড়িতেই তো আমার বাড়ি।”
মা সপ্রতিভভাবে উত্তর দিতো,

” হ্যাঁ, তাইতো। এটাই তোমার বাড়ি।”

” তাহলে তুমি কেন বলো বাপের বাড়ি যাচ্ছি? তোমার বাবা-মা তো ওখানে থাকে। ওটাই তো তোমার বাড়ি তাহলে।”

মা একটু উদাস হয়ে উত্তর দিতো,

” বিয়ের পরে বাবা-মায়ের বাড়িকে বাপের বাড়ি বলতে হয় মা।আর এটা এটা শ্বশুরবাড়ি।”

আমি তখন আবার প্রশ্ন করতাম,

” কই বাবা তো এমন বলে না মা।বাবার তো বিয়ে হয়েছে।বাবা তো কই বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি বলেনা।”

মেয়ের “কেন এমন বলতে হয়” এত বড় একটা প্রশ্নের উত্তর মা সেদিন দিতে পারিনি আমাকে। কোনো মা ই তার মেয়েকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। কারণ তারা প্রশ্নটা নিজেই করতে পারেনা সমাজকে। চাইতে পারে না উত্তর। এখন অনেকেই রে রে করে বলে উঠবেন, তা বাড়ি করে বা ফ্ল্যাট কিনে তবে বিয়ে করলেই হয়। তবেই তো একটা নিজের বাড়ি থাকবে।

আচ্ছা,একটা কথা বলুন তো, একটা ছেলে যদি বাড়ি না করে বাবার বাড়িকে নিজের বাড়ি বলে দিব্যি চালিয়ে দিতে পারে, তাহলে মেয়ে বলেই শুধু বাড়ি করার গুরু দায়িত্ব নিজের কাঁধে কেন তুলে নিতে হবে?কেন তারা বাবার বাড়িকে সব রকম ভাবে নিজের বাড়ি বলে সমাজে মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে না। আর বাড়ি করা তো কোন একটা ছোটখাট ব্যাপার নয় ঘড়ি বা জামা কেনার মতো।অনেক অনেক সাধ্যের দরকার হয়।30 বছর বয়সের মধ্যে এটা করে ওঠা সব মানুষের পক্ষেই একটা চ্যালেঞ্জ। আর সাথে দোসর মেয়েদের বায়োলজিক্যাল ক্লক তো আছেই।সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে সবাই সমর্থ হবে তারই বা কি মানে আছে। এমনকি কোনো উচ্চ পদে চাকরি করলেও 30 বছর বয়সের মধ্যে 20-22 লাখ টাকা জোগাড় করা মুখের কথা নয়। তাই মেয়েদের ওপর আরো একটা নতুন বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং বাপের বাড়িটাকে নিজের বাড়ি বলার অধিকারটুকুও দিন।তাতেই মেয়েরা হয়তো অনেকটা এগিয়ে যাবে। এই প্রসঙ্গে কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারে, কারো দাদা বা ভাই থাকলে সেই উত্তরাধিকারসূত্রে বাবার বাড়ি মালিক হয়,বা বাবার বাড়িতে থাকে। সে ক্ষেত্রে পদক্ষেপটা বাবা মার ই নেওয়া উচিত। সরকার তো সরকারের তরফ থেকে হাজার নিয়ম-নীতি করে দিয়েছে।বাদবাকিটা বাবা-মা তৈরি করতে হবে।

” তোর বিয়ে হয়ে গেছে তুই বাড়ি দিয়ে কি করবি।” কিংবা

“তোর তো বাড়ি আছে, শ্বশুর বাড়ি তোর বাড়ি।” “এই বাড়িতে মাঝে মাঝে ঘুরতে আসবি। কিন্তু মেয়েদের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি হয়।”

এসব মন্তব্য একটু সরিয়ে রেখে নিজের মেয়েটাকে সত্যিকারের আদরটুকু দিতে যৌতুক নয় সম্পত্তির ভাগটা দিন। বাড়ির একটা অংশ মেয়ের নামে করে দিন। আপনার মৃত্যুর পরও যেনও সেখানে এসে সে নিজের জায়গা ভেবে স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারে। হয়তো সে কোনোদিনই এসে থাকবে না, তবুও একটা আশ্রয়, একটা নিজের ঠিকানা, এটাই অনেক জোরে মেয়েদের মনে এনে দেয় ।তাই বাবা আমাদের কাছে অনুরোধ অন্যরা আপনার মেয়ের কথা ভাববে, তার প্রতি মানবিক হবে,এই চিন্তা-ভাবনার আগে ,নিজেরা একটু নিজেদের মেয়েদের প্রতি মানবিক হন।দেখবেন ওদের পৃথিবীটা অনেক বদলে গেছে।

কলমে-মৌমিতা ভাওয়াল দাস
ছবি: ফেইসবুক