kolponar rong

–“আমাগো বাড়ীতে কেউ পেত্থমবার এরকম করলো, তা মেয়েটা কী করে শুনি ?”
–“সবকিছুই তো প্রথমবার‌ই হয় মা , সবকিছু তো কাউকে না কাউকে প্রথম শুরু করতে হয় তবেই তো সাহস পায় বাকিরা , ও তুমি চিন্তা কোরোনা , ও ঠিক মানিয়ে নিতে পারবে ”

–“কী ক‌ইলি ? আমাগো মানিয়ে নেবে ? তা ক‌ইলি না তো কী কাম করে ম্যাইয়াডা ?”

–“ওহ্ .. তেমন কিছু না , রান্নাবান্না ভালো জানে, আর তাছাড়া সেলাইফোঁড় ও জানে , তোমার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সব কাজ করে দেবে তুমি দেখো ”

–“কেনো গো আমাগো কী বাড়ীতে কাম করার লগে ব‌উ আনবো ? সেসব চলবনি কয়ে দিলম , কাম করার লগে লক্ষী আছে খেন্তি আছে ।তর ব‌উ হ‌ইয়া যে ই বাড়ীর চৌকাঠে পা রাইখবে ওগো নিজের পরিচয় থাকতে হ‌ইবো গিয়া ”

–“আছে তো পরিচয় ! ওর নাম রস্মিতা , ফর্সা চেহারা , চোখদুটো পটলচেরা আর আমার থেকে বয়সে তিন বছরের ছোটো আর ঘটি বাড়ীর মেয়ে । মেয়েদের আবার এর বেশি পরিচয় লাগে নাকি ?”

–“ব্যাস ! হ‌ইয়া গেল , আমি এমন পরিচয় চাইনিকো বুঝলি , মেয়েমানুষ মানেই শুধু রূপ চেহারার বর্ণনা দেওয়ার দিন শ্যাষ ! ম্যাইয়া রাঁধনফোড়ন জানে কিনা সে নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই ! তুই শুধু এইটা ক ও মাইয়্যা লেখনপড়ন কদ্দুর শিখসে ! আর ওগো কোনো পরিচিতি আছে কিনা সেইডা ক ! আমার ব‌উমা রূপে সুন্দর না হ‌ইলেও চলবো , শুধু যেন মাথা উঁচু করে বাঁচার ক্ষমতা রাখে ”

–“ও তো ঘটি বাড়ীর মেয়ে তাতে তোমার আপত্তি নেই ? যদি মানিয়ে নিতে না পারে তখন চোখজ্বালা ধরবে না তো তোমার ? ”

–“বাঙাল নয় তো কী হ‌ইসে ! ঘটিই চলবো , আর ও আমাদের মানাবে ক্যান ? ও ওর মত‌ই চলবো আমাগো মানাতে হবে , আমরা ওর কাছে নতুন , এই পরিবার ওর কাছে নতুন, লোকগুলান নতুন , আদবকায়দা নতুন , ও কেন আমাগো মানাই নেবে? মানাবো তো আমরা , ওর ভালোলাগা মন্দলাগা সবকিছুর দায় আমাদের, ও কোনটা পছন্দ করে কোনটা করেনা , সবকিছু তো আমাদের দেখতে হবে , জোর ক‌ইরা কিছু চাপিয়ে দেয়া তো অন্যায় ! ঘটি হোক বাঙাল হোক আমরা তো ওর কাছে অচেনায় , ধিরে ধিরে ও যাতে আমাদের সাথে মিশে যেতে পারে সেই দায়িত্ব আমাদেরই নেওয়া উচিত , মাইয়্যারা হ‌ইল গিয়া কাদার ডেলা ভালোবাইস্যা আগলিয়া রাখলেই হ‌ইলো , তা ক‌ইলি না তো কী করে ?”

–“আই পি এস রস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায় , কড়া মেজাজ। আর হ্যাঁ দুটো অ্যাওয়ার্ড ও আছে ঝুলিতে সবচেয়ে মেজাজী আর তীক্ষ্ণ নজরের অধিকারিনী ! তবে শাড়ী পরতে জানেনা , জিন্স আর ওয়েস্টার্ন , সপ্তাহে একদিন‌ও ছুটি নেই , খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু রান্নাবান্না দরকার ততটুকুই জানে , আর সারা ঘরে মেডেল আর ট্রফিতে ভর্তি ইন্টার ন্যাশনাল ডান্স চ্যাম্পিয়ন‌ও বটে ”

–“একশোয় একশো ,ওগো কয়ে দিস ওরে আমি মানিয়ে নিতে পারবো , বলছি ও বিল্টু যা না বাজার থেকে দু কেজি রসগোল্লা নিয়ে আয় না , পাড়ার লোককে একটু ডেকে খাওয়াই , কাল তো পহেলা বৈশাখ রস্মিতারে একবার নিয়ে আসিস , শাড়ি পরনের লাগবো না , জিন্সেই আসুক । আমাগো বাঙালীর ঘরের মাইয়্যারা বারো হাত কাপড় থেকে বেরিয়ে আকাশটারে ছুঁয়ে আসুক , ওরা মেডেল জিতুক , অ‌্যাওয়ার্ড আনুক , বিশ্বজয় করুক , নতুন বছর শুরু হোক নতুন ভাবনা নিয়ে ”

–“তোমার ব‌উমা এত শিক্ষিত আর আমার থেকেও উঁচু পোস্টে কাজ করে এতে তোমার মাথা হেঁট হবেনা ? লোকে তোমায় কথা শোনাবে না ?”
–“ওগো মুখ বন্ধ করার জন্য‌ই তো রসগোল্লা আননের কথা ক‌ইলাম , তুই ক‌ইতিস না কাউকে না কাউকে নিয়ম ভেঙে নতুন নিয়ম গড়তে হয় ! আমাগো বাড়ীর ব‌উ সেই প্রথমজন‌ই হোক , ওকে শাঁখা সিঁদুর এর পাশাপাশি আমি বন্দুক ধরতেও দেখতে চাই , সাজিয়ে রাখার জন্য বাড়ীর ব‌উ না এনে ওদের হাতে সেজে ওঠার জন্য বাড়ীতে ব‌উ আসুক , ব‌উ মানেই রান্না জানা ঘরোয়া সুন্দরী মিষ্টভাষী না হয়ে সবদিকে পারদর্শী হোক , তাতে শ্যামলা কিংবা বেঁটে হলে আমার আপত্তি নেই , শুধু যেন একা একটা মেয়েমানুষ না হয়ে একশোটা ছেলের থেকেও উৎকৃষ্ট হতে পারে ”

–“আমি তোমাকে ভালোবাসি মা , তোমার মত শ্বাশুড়ী যেন সব রস্মিতারা পায়”

–“উঁ হু শ্বাশুড়ী মা না বন্ধু ক‌ও … বন্ধু ”

–“আমি যাই মিষ্টি নিয়ে আসি , সব্বার মিষ্টি মুখ করাবো ”

ছেলেটা পা ছুঁয়ে প্রনাম করলো মা’কে । সত্যিই তো আমাদের সমাজটা বদলাতে হবে আমাদের‌ই , প্রথম শুরু টা নাহয় নিজের বাড়ী থেকেই হোক ।