মুড সুইং শুধু মেয়েদের হয়না ছেলেদেরও হয়

মন আছে মন খারাপ তো হবেই, এটাই তো স্বাভাবিক

মুড সুইং শুধু মেয়েদের হয়না ছেলেদেরও হয় , এই মন ভালো, এই মন খারাপ। মন আছে মন খারাপ তো হবেই। এটাই তো স্বাভাবিক তাই না, অস্বাভাবিক এটাই সেই সময় তাদের কেউ বোঝে না।বারবার মুড চেঞ্জ হয় কারন ছাড়াই, হয়তো কখনো কখনো কারন থাকে। ঘনঘন মুডের এই পরিবর্তন কে মুড সুইং বলা হয়ে থাকে।
মুড সুইং কম বেশি আমাদের সকলের হয়ে থাকে, কিন্তু ব্যাপারটা আসলে আমরা যতটা নরমাল ভাবি ততটা কিন্তু না, সে সময় মানুষ গুলোর পাশে থাকতে হয় নয়তো, ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। অনেকে জেনে বুঝে গুরুত্ব দেয় না। নেকামি ভাবে, কেউবা পাগল ভাবে, তার মন খারাপ জেনেও খারাপ ব্যবহার করে, ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেয়।

মুড সুইং- এর ফলে একটা মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। তাই কারো মুড সুইং হচ্ছে মনে হলে তাকে ঠেলে না দিয়ে সাবধানতার সাথে, তার সাথে কথা বলুন। তার কথা শুনুন, ভালোবাসুন, কখনো ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেবেন না। এতে অবস্থা আরো জটিল হতে পারে।
মুড সুইং সকলের হতে পারে নারীকেন্দ্রিক শুধু না, পুরুষদের ও হতে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মুড সুইং হয়ে থাকে। হ্যাঁ পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি হয়ে থাকে। বয়ঃসন্ধি কালে বেশি হয়।

বয়ঃসন্ধি কালে ছেলে- মেয়ে উভয়ের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। হরমোনের পরিবর্তন ঘটে যার ফলে মুড সুইং হয়। এই সময় ছেলে- মেয়ে উভয় খুব আবেগ প্রবন হয়ে পড়ে।

মুড সুইং খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। নিজের সুস্থ মানসিকতা কে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দিতে থাকে। নিজের ভেতরে অতিরিক্ত সুখ ও দুঃখ বোধ হয়, কোনো কিছু নিয়ে অকারণে রেগে যায়।

মুড সুইং নারীদের বেশি হয় পিরিয়ডের সময়, হরমোনাল Imbalance এর জন্য হয়ে থাকে। কিছু নারী পিরিয়ড শেষ হওয়ার দু একদিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। তবে, কিছু নারী বেড়িয়ে আসতে পারে না, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। সৃষ্টি হয় হতাশা, বিষন্নতা, খিটখিটে মেজাজের হয় যায়, ঘন ঘন মুডের চেঞ্জ হতে থাকে। তাদের কখনো একা ছেড়ে দিতে নেই, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়, তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া মানে বিপদ আরো বাড়বে।

মুড সুইং যাদের হয় তারা একটু তেই আশা হারিয়ে ফেলে, এই ধরুন কোনো কাজ খুব মন দিয়ে করছিলো হঠাৎ করতে করতে তার মনে হয় তার দ্বারা হবে না। আশা হারিয়ে ফেলে। ধরুন কিছু নিয়ে তার সঙ্গে মজা করছেন সেও করছে কিন্তু হঠাৎ রেগে যায়,আপনিও বুঝে উঠতে পারেন না কেন এমন হলো। তখন আপনাকে বুঝতে তার মুড সুইং হচ্ছে।

মুড সুইং এ হলে অনবরত বিপরীতধর্মী আবেগের মধ্যে দিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ মন খারাপ, হঠাৎ ভালো। কখনো মনে হয় আমার দ্বারা কিছু হবে না, কখনো মনে হয় আমি সব পারি। সবই অল্প সময়ের জন্য । তাদের মুড বারবার চেঞ্জ হতে থাকে।

যাদের মুড সুইং হয় তারা নিজের মনের সাথে অনোবরতো একটা যুদ্ধ করতে থাকে, বেড়িয়ে আসতে চায় কিন্তু পারেনা। হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায় কারন ছাড়াই, আবার হঠাৎ মন ভালো হয়ে যায় কেন হয় তারাও বুঝে উঠতে পারে না।

খুব খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়, তারা সবসময় চায় সামনের মানুষটির সঙ্গে নরমাল বিহেভ করতে কিন্তু মাঝে মাঝে মুড সুইং এর মাত্র এত বেড়ে যায় নিজের মনকে কন্ট্রোল করতে পারে না।

আমরা তখন মানুষ টিকে ভুল বুঝি, সে ইচ্ছে করে, করে না, সে চায়,আপনি তাকে বুঝুন।

আপনাকে বুঝতে হবে, তার মন খারাপে সঙ্গী হয়ে পাশে থাকতে হবে, ভরসার হাত হাতে রাখতে হবে।
অপরদিকে আপনিও যদি তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন,ভুল ভেবে দূরে ঠেলে দেন এতে বিপরীত হতে পারে, যার ফলে মানুষটা ধীরে ধীরে সকলের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে। মনখারাপ হলে কাউকে বলতে পারে না, ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যেতে থাকে। সকলের সামনে হাসে কিন্তু মানুষটা আঁড়ালে কাঁদে, নিজের সঙ্গে নিজে অনবরত লড়াই করে চলে প্রতিনিয়ত, এই খবর আমরা কেউ রাখি না, বুঝেও গুরুত্ব দিই না। তারা ভয় পায়, মনখারাপ কথা বললে সে ভুল ভেবে দূরে সরিয়ে দেবে না তো। তারা একা থাকতে চায় সবসময়, কোনো কিছুই যেন তাদের ভালো লাগে না, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, কখনো খুব হাসিখুশি থাকে, কখনো আড়ালে চিৎকার করে কাঁদে। কখনো চুপচাপ হয়ে যায়।
মুড সুইং হয় সাধারণত হরমোনাল ইমব্যালেন্স, মাসিক সহ আরো বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। একটা মেয়ে সে সময় কতটা অসহায় বোধ করে তার আন্দাজ টুকু আমরা করতে পারি না। সবাই ভুল বোঝে, তাদের হঠাৎ মনের পরিবর্তন হওয়া টাকে অনেকে ন্যাকামি ভাবে, অনেকে ভাবে বদমেজাজি। মুড সুইং এর সময় নিজেও বুঝতে পারে না কি বলছে সামনের মানুষ টিকে, আবার একটু পরেই তাদের ভুল বুঝতে পারে নিজে থেকেই, নিজে থেকেই আবার আপনাকে সরি বলবে।

আপনার ওপর রেগে যাচ্ছে, অকারনে খারাপ বিহেভ করছে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে রেগে যাচ্ছে, তাহলে তাকে জড়িয়ে ধরে পাশে থেকে সুন্দর করে বোঝান, তাকে সময় দিন। মাসিকের সময় একটু খেয়াল রাখবেন তাদের শরীর খারাপের পাশাপাশি মনখারাপও হয়, মুড সুইং হয় সেই সময় বেশি বেশি। পাশে থাকুন, ভুল বুঝে দূরে ঠেলে না দিয়ে কাছে টেনে নিন।

মুড সুইং যাদের হয় তারা অকারনে ছোট ছোট বিষয়ে খুব ওভার রিয়াক্ট করে ফেলে। কখনো কখনো খুব হাসিখুশি থাকে। কখনো কখনো সকলের সঙ্গে বেশ মজা করে কথা বলে, কখনো চুপচাপ হয়ে যায়। ভেতরে চেপে রাখে তার একাকিত্বের ছাপ। সে মানুষ গুলোকে একটু আপন করে নিতে শিখুন, সময় থাকতে তাদের বুঝুন।।

এই তুই এত হাসিস কেন, সত্যিই রে তোর কোনো দুঃখ নেই,ভুল কথাটা ভুল! মানুষ যখন মন খারাপ হবেই, শরীরের যেমন শরীর খারাপ হয় ঠিক তেমনি মনের ও মনখারাপ হয়, কম বেশি সকলের হয়।কেউ প্রকাশ করতে পারে কেউবা পারে না। সে খুব হাসছে মানে এই না তার মনখারাপ হয় না, হয়তো সে প্রকাশ করতে পারে না, হয়তো আপনার বোঝার ক্ষমতা টাই নেই। আপনার যেমন মন খারাপ হয় তারও হয়। বুঝতে শিখুন।

শারিরীক রোগ সারানো যায় ঔষধ দিয়ে, কিন্তু মানসিক রোগ খুব ভয়ানক, ঔষধ একটাই তাদের সঙ্গে খোলামেলা ভাবে কথা বলতে হয়, তার ভেতরে ঢুকতে হয়, সময় নিয়ে মানুষটাকে বুঝতে হয়।

তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। সে নিজেও জানে না কেন এমন হয়। এমন একজন হন যার কাঁধে মাথা রেখে মনের কথা গুলো নির্দ্বিধায় বলতে পারে। কাঁদতে ইচ্ছে হলে যেন কাঁদতে পারে।

মুড সুইং শুধু মেয়েদের হয়না ছেলেদেরও হয়। মুড সুইং হরমোন চেঞ্জেস এর জন্য হয়ে থাকে

যে মেয়েটির ঘনঘন মুড সুইং হয় তাদের প্রতি সবাই বিরক্ত হয়, কিন্তু না এটা ঠিক না সময় থাকতে আমাদের বোঝে উচিত,
এরা আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে, তাই সময় থাকতে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশুন, কথা বলুন। একটা কথা মানুষকে টেনে নিচে নামাতে যেমন পারে, ঠিক তেমনি এগিয়ে নিয়ে যেতেও পারে। শরীর খারাপের ঔষধ আছে, মন খারাপে ঔষধ কিন্তু আপনার কথা,তাকে তার মতো করে বোঝা উচিত, ভরসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত, কারন তারা খুব একাকী বোধ করে।

তার হঠাৎ হঠাৎ মুডের পরিবর্তন কে ন্যাকামি ভাববেন না, পাগল এইসব বলে, খারাপ আচরণ করবেন না, আপনি তার মুখের ওপর এমন ভাবে বলে তাকে আরো বিপদে ঠেলে দিয়ে থাকেন, ভীষণ বড়ো অপরাধ এটা, বিরত থাকুন এই সব আচরণ থেকে। পাশে থাকতে শিখুন, এতে মানুষটা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যেতে পারে। এরা নিজেকে খুব একা ভাবে, নিজেই নিজেকে যেন সহ্য করতে পারে না, সবকিছু যেন আশাহীন মনে হয়, কখনো চিৎকার করে কাঁদে কখনো চুপচাপ হয়ে যায়। সে মূহুর্ত একটা মানুষ দরকার যে তাকে তার মতো করে বুঝবে, পাশে থাকবে। তার এলোমেলো অর্থহীন কথা গুলো খুব ধৈর্য নিয়ে শুনবে। যদি দেখছেন কারো সঙ্গে এমনটা হচ্ছে প্লিজ প্লিজ পাশে থাকুন। মুড সুইং এর বেড়া জালে ঠেলে দেবেন না, মেরে ফেলবেন না, শক্ত করে তার হাতে হাত রাখুন, সাহস দিন, অনুপ্রেরণা দিন ভালোবাসা দিন।
আমাদের ছোট ছোট ভুল তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। সঙ্গ দিন, একমাত্র আপনার কথাই পারে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে।

মুড সুইং যাদের হয় তারা সবচেয়ে অসহায় প্রানী, নিজের মনকে কন্ট্রোল করতে পারে না। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে চায় কিন্তু মাঝে মাঝে খারাপ ব্যবহার করে ফেলে, হঠাৎ রেগে যায়, বাজে কথা বলে, কখনো কখনো এড়িয়ে চলে কোনো কারণ ছাড়াই, তারপর নিজেরাই কষ্ট পায়।

সবাই তাদের পাশে আছে তবুও একাকিত্বে ভোগে। কখনো তাদের এমন খারাপ লাগাকে এড়িয়ে যেতে নেই,
বেশির ভাগ লোকই মুড সুইংয়ে ভোগা মানুষদের বদমেজাজী, খারাপ ভাবে, ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেয়।

এদের ভুল বোঝা থেকে বিরত থাকুন, এদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, বন্ধুসুলভ আচরণ করুন।
আমার আজকের এই মুড সুইং নিয়ে লেখাটির উদ্দেশ্যে হলো, একটা সচেতনতা তৈরি করা যাতে আমরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। নারী পুরুষ সবার সাথেই যেন আমাদের আন্তরিকতা বজায় থাকে।

খুব একটা গুছিয়ে লিখতে পারলাম না, যতটা পেরেছি ব্যাপারটা প্রকাশ করলাম। কমেন্ট বক্সে নিজেদের মুড সুইং এর কথা জানতে পারেন।
সবশেষে, আমার একটাই অনুরোধ, ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন, তবে ব্যাপারটা বুঝবেন, গুরূত্ব দিয়ে দেখবেন। আসলে আমরা জানি ঠিক কতটা ভয়ানক এই মুড সুইং। কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন। যতটা পারবো সাহায্য করবো।

কে জানে, মুড সুইংয়ের পরবর্তী স্বীকার আমি বা আপনিও হতে পারি! সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, একে অপরকে সুস্থ রাখবেন।
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। 🙏🏻🙏🏻
ধন্যবাদ।।
©কলমে – ঝিলিক প্রামানিক

Read : তোকে ছাড়া আমি কিভাবে ভাল থাকবো !!!!!